শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে কদর ইসলামের অন্যতম পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ রাত, যা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। মহান আল্লাহ এই রাতকে অতুলনীয় বরকত ও রহমতের উৎস বানিয়েছেন এবং কুরআনুল কারিমে একে “হাজার মাসের চেয়েও উত্তম” বলে উল্লেখ করেছেন (সূরা আল-কদর, আয়াত ৩)।

এই মহিমান্বিত রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত, মাগফিরাত (ক্ষমা) ও নাজাত (মুক্তি) লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। শবে কদরের ইবাদতের মধ্যে অন্যতম হলো নামাজ ও দোয়া।শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়ারাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই রাতে বেশি বেশি নামাজ আদায় করতে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছেন। বিশেষ করে, তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন এমন কিছু দোয়া, যা এই রাতে পড়লে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।

তাই শবে কদরের নামাজ, দোয়া ও ইবাদতের সঠিক নিয়ম জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে শবে কদরের নামাজের নিয়ম, নিয়ত, পড়ার পদ্ধতি ও বিশেষ দোয়াগুলো আলোচনা করা হলো, যাতে সবাই সঠিকভাবে এই রাতের ইবাদত সম্পন্ন করতে পারেন।

শবে কদর কি?

শবে কদর একটি মহিমান্বিত রাত, যা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে পড়ে। সাধারণভাবে ২৬ রমজান দিবাগত ২৭তম রাতকেই শবে কদর হিসেবে ধরা হয়। কোরআনের ভাষায় একে বলা হয় “লাইলাতুল কদর”, যার অর্থ হলো অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাত।

এই রাতে বান্দার ভাগ্য নির্ধারিত হয়, ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন, এবং আল্লাহর অসীম রহমত বর্ষিত হয়। তাই, এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম?

শবে কদরের রাতে নফল নামাজ যত বেশি পড়া যায়, তত বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। সাধারণত, দু’ রাকাত করে নামাজ পড়তে হয়। প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর নিম্নলিখিত সূরাগুলোর যেকোনো একটি পড়া উত্তমঃ

  • সূরা ইখলাস
  • সূরা কদর
  • আয়াতুল কুরসি
  • সূরা তাকাছুর

সেরা আমলঃ

কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। তবে এর বেশি পড়লে আরও বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। এছাড়াও আপনি সালাতুত তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ এবং শেষ রাতে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা করতে পারেন।

শবে কদরের নামাজের নিয়ত?

আরবি নিয়তঃ

نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْنِ صَلَاةَ لَيْلَةِ الْقَدْرِ نَفْلًا، مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ، اللَّهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আলা রাক‘আতাইনি ছালাতা লাইলাতুল কদরি নাফলান, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ শরীফাহ, আল্লাহু আকবার।

বাংলা নিয়তঃ

“আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দু’ রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।”

শবে কদরের বিশেষ দোয়া?

হজরত আয়েশা (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি জানতে পারি যে, এটি লাইলাতুল কদর, তাহলে আমি কোন দোয়া পড়ব?”

রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি এই দোয়াটি পড়বেঃ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণঃ

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।

অর্থঃ

হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।

শবে কদরের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া?

১. পাপ মোচনের দোয়া

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণঃ

রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।

বাংলা অর্থঃ

হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন, কারণ আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা মুমিনুন : ১১৮)।

২. ঈমান ও রহমতের দোয়া

رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

বাংলা উচ্চারণঃ

রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।

বাংলা অর্থঃ

হে আমাদের প্রভু! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি, তুমি আমাদের ক্ষমা করো ও দয়া করো। (সূরা মুমিনুন : ১০৯)

৩. গুনাহ মাফের দোয়া

رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।

বাংলা অর্থঃ হে আমার রব! আমি নিজেকে অত্যাচার করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। (সূরা কাসাস : ১৬)

৪. জান্নাতের দোয়া

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণঃ রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।

অর্থঃ হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গুনাহ মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো। (সূরা আলে-ইমরান : ১৬)

শবে কদরের ফজিলত?

১. একটি রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ

“লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” (সূরা কদর : ৩)

২. এই রাতে ফেরেশতারা অবতরণ করেন

“এই রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে অবতরণ করেন।” (সূরা কদর : ৪)

৩. সকল গুনাহ মাফ করা হয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও নেক নিয়তে ইবাদত করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি)

৪. শয়তানের প্রভাব থাকে না

এই রাতে শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয় এবং তারা মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

শেষ কথা

শবে কদরের রাত হলো এক অনন্য সুযোগ, যেখানে আল্লাহর অশেষ রহমত, বরকত এবং গুনাহ মাফের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এই রাতে আমরা বেশি বেশি ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, তাওবা-ইস্তিগফার এবং দোয়া করে নিজেদের আত্মশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করতে পারি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত রাতের বরকত ও রহমত দান করুন। আমিন।

Leave a Comment