ইসলামে নফল রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা একজন মুসলিমের আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাকওয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজা পালনের মাধ্যমে একজন মুসলিম অতিরিক্ত নেকি অর্জন করতে পারেন।
এটি আত্মসংযম চর্চার পাশাপাশি ধৈর্য ও শৃঙ্খলাবোধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নফল রোজার মাধ্যমে গুনাহ মাফ, দোয়া কবুল ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ হয়। বিশেষত সোম ও বৃহস্পতিবার, আরাফার দিন, আশুরার দিন ও শাবান মাসের নির্দিষ্ট দিনে নফল রোজার ফজিলত বেশি।
 এটি শুধু আত্মিক উন্নতির মাধ্যমই নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করতে পারে। সর্বোপরি, নফল রোজা মুসলিম জীবনে এক মহৎ আমল, যা তাকওয়া বৃদ্ধি, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নফল রোজা কি?
নফল রোজা হলো ঐচ্ছিক বা স্বেচ্ছামূলক রোজা, যা ইসলামে বাধ্যতামূলক নয়, তবে রাখলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।
এটি ফরয রোজার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কেউ যদি নফল রোজা রাখে, তবে তিনি নেকি পাবেন, কিন্তু না রাখলে কোনো গুনাহ হবে না।
নফল রোজার প্রকারভেদ ও গুরুত্ব?
ইসলামে বিভিন্ন সময়ে নফল রোজার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নফল রোজা হলোঃ
১. শাওয়াল মাসের ছয় রোজা
রমজানের ফরয রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা খুবই ফজিলতপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখবে, সে যেন পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য সওয়াব লাভ করবে।” (মুসলিম)
২. জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিনের রোজা
জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিন রোজা রাখা সুন্নত, বিশেষ করে ৯ জিলহজ (আরাফাতের দিন) রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
আরাফাতের দিনের রোজা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি যে, আরাফার দিনের রোজা এক বছরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়।” (মুসলিম)
৩. আশুরার রোজা (৯ ও ১০ মুহাররম)
মুহাররম মাসের ১০ তারিখে (আশুরার দিন) রোজা রাখা সুন্নত এবং উত্তম। রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।” (মুসলিম)
১০ মুহাররমের সঙ্গে ৯ অথবা ১১ মুহাররমের রোজা রাখা উত্তম।
৪. প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের রোজা
এই তিন দিন রোজা রাখা সুন্নত এবং সওয়াব বহুল। রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখবে, সে যেন পুরো জীবন রোজা রাখার সওয়াব পাবে।” (বুখারি, মুসলিম)
৫. প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা
রাসূল (সা.) নিয়মিত সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। তিনি বলেছেনঃ “মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। আমি চাই, আমার আমল যখন পেশ করা হবে, তখন আমি রোজাদার থাকি।” (তিরমিজি)
৬. শাবান মাসের রোজা
রাসূল (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। তিনি বলেছেনঃ “শাবান মাস হলো রমজানের প্রস্তুতির মাস।” (আবু দাউদ)
৭. দাউদ (আঃ)-এর রোজা
একদিন রোজা রাখা, একদিন বিরতি দেওয়ার নিয়ম অনুসরণ করা রাসূল (সা.) সর্বোত্তম রোজা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেনঃ “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো নবী দাউদ (আঃ)-এর রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং একদিন বিরতি দিতেন।” (বুখারি, মুসলিম)
আরও পড়ুনঃ সাওম রাখার জন্য সেহরি খাওয়ার হুকুম কি
৮. বিবাহে অসমর্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা
যারা বিয়ে করতে অক্ষম, তাদের জন্য বেশি করে নফল রোজা রাখা সুপারিশ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি বিয়ে করতে অক্ষম, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা তার জন্য আত্মসংযমের ঢালস্বরূপ হবে।” (বুখারি, মুসলিম)
নফল রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত?
- অতিরিক্ত সওয়াব পাওয়া যায়।
 - গুনাহ মাফ হয় ও আত্মশুদ্ধি অর্জিত হয়।
 - আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
 - জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
 - স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উপকারী, যেমনঃ ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক প্রশান্তি লাভ।
 
শেষ কথা
নফল রোজা বাধ্যতামূলক না হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা অতিরিক্ত সওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়। রাসূল (সা.) নিজে নিয়মিত নফল রোজা রাখতেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে উৎসাহিত করেছেন।
তাই আমরা যদি নিয়মিত নফল রোজা পালন করি, তাহলে আমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয়ই উপকৃত হবে।