আসল মুক্তা চেনার উপায় | মুক্তা কোথায় পাওয়া যায়

মুক্তার উৎপত্তি ঝিনুক থেকে। ঝিনুকের বাস জলাশয়ে। অলঙ্কার শিল্পে মুক্তার ব্যবহার দীর্ঘকালের। মুক্তার অবস্থান হীরার পরেই। মুক্তা একটি দামি রত্ন ও আভিজাত্যের প্রতীক। প্রধানত মুক্তা অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, এ ছাড়া মুক্তাচূর্ণ ওষুধ ও প্রসাধন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মুক্তার ব্যবহার ওষুধ শিল্পে,আমাদের দেশে ব্যবহার হয় জ্যেতিষশাস্ত্রে।মুক্তাআমাদের দেশে রয়েছে অন্তহীন জলাশয়। পুকুর-ডোবা, হাওড়-বাঁওড়, নদ-নদী, খাল-বিল থেকে শুরু করে এমন কোনো জলাশয় নেই বললেই চলে। যেসব জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে ঝিনুকের চাষ করা গেলে, মুক্তা হতে পারে ভাগ্য বদলে দেয়ার চাবিকাঠি। অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানে মুক্তা খুলে দিতে পারে নতুন দিগন্ত।

বিশেষত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে নতুন একটি ক্ষেত্র বিশেষ। দেশে উৎপাদিত মুক্তার বাজার এখনও তেমনভাবে গড়ে উঠেনি। এসব মুক্তা পরবর্তীতে অলংকারে ব্যবহার করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তাচাষিগণ নিজস্ব উদ্যোগে অনলাইন/অফলাইনের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদিত ইমেজ মুক্তা ও মুক্তাজাত অলংকার বিক্রি করছেন।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশী অ্যাপ প্রতিদিন 1000 টাকা আয় পেমেন্ট বিকাশ

মুক্তা বাজারজাতকরণ ও খরচ?

চাষি পর্যায়ে একটি ভালো মানের ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ১ বছর পর তা ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমান বাজারে ১৮থেকে ২৪ মিলিমিটার একটি মুক্তার দাম ৫৪ মার্কিন ডলার। আর একটি ঝিনুকে মুক্তা হয় ১০ থেকে ১২টি।

সে হিসেবে মাত্র একটি ঝিনুক থেকে বছরে ৮থেকে ৯শ’ মার্কিন ডলার বা ৪২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। অথচ এতে খরচ হবে মাত্র ১৭ থেকে ১৮শ’ টাকা। গবেষণায় আরও বেরিয়ে এসেছে, মুক্তা উৎপাদনের জন্য অস্ত্রোপচার করার পর ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৭৬ ভাগ এবং মুক্তা তৈরির হার ৮২ ভাগ।

বাংলাদেশের উপকূলীয় লোনা পানিতে ৩শ’ প্রজাতির এবং মিঠা পানিতে ২৮ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। তবে ৫ ধরনের ঝিনুকে মুক্তা পাওয়া গেছে। গবেষণায় এখন পর্যন্ত কমলা, গোলাপি, সাদা, ছাই- এই ৪রঙের এবং গোল, রাইস ও আঁকাবাঁকা এই ৩ আকারের মুক্তা পাওয়া গেছে। উপকূলীয় মহেশখালী দ্বীপের পিঙ্ক পার্ল বা গোলাপি মুক্তা খুবই বিখ্যাত।

আরো পড়ুনঃ গেম খেলে টাকা ইনকাম

মুক্তার দাম বাংলাদেশে কত?

বাংলাদেশে একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১২টি মুক্তা জন্মে। প্রতিটি মুক্তার খুচরা মূল্য কমপক্ষে ৫০ টাকা। প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ১০০টি ঝিনুক চাষ করা সম্ভব। এবং প্রতি শতাংশে ৮০টি ঝিনুকে গড়ে ১০টি করে ৮০০ মুক্তা পাওয়া গেলে যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

সেই হিসাবে প্রতি একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া মুক্তার দামটা মালার ডিজাইন এবং মানের ওপরও নির্ভর করে। বা মুক্তার গয়নার দাম নির্ভর করে মুক্তার আকার আর রংয়ের ওপর। মুক্তার একটা কানের টপের দাম ১০০ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

একটা মালার দাম ৮০০ থেকে ১০০০০ টাকা তবে মালার সঙ্গে অন্যান্য পাথর যোগ করা থাকলে দামে আরও বেশি তারতম্য আসবে। প্রাকৃতিকভাবে যে মুক্তাটা পাওয়া যায়,তার দাম টা চাষের মুক্তার চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়ে থাকে।

মুক্তার আংটির দাম?

মুক্তার পিস প্রতি আংটির দাম ৮ থেকে ১২,১৩ হাজার। এ রকম দামে সুন্দর এবং মানসম্মত আংটি পাওয়া যায়। তবে তারও নিম্নে ৫,৬ হাজারেও পাওয়া যায় বাজারে কিংবা বিভিন্ন মানসম্মত অনলাইন পেইজে। ভালো করে দেখে শুনে যাচাই-বাছাই করে, কনফার্ম হয়ে অর্ডার করবেন।

মুক্তার আংটি কোন আঙুলে পড়তে হয়?

মুক্তো সবসময় রুপোর আংটিতে করেই পরা উচিত।ডান হাতের ছোটো আঙুলে বা মুক্তো সব সময় অনামিকা বা কনিষ্ঠায় ধারণ করা দরকার। সেই রকম চন্দ্র গ্রহের রত্নও অনামিকা বা কনিষ্ঠায় ধারণ করা দরকার। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কিছু না কিছু সমস্যা রয়েছে এই সমস্যাগুলোকে সহজেই কাটিয়ে ওঠার জন্য জ্যোতিষীরা নানান রত্ন ধারণের পরামর্শ দেন।

আরো পড়ুনঃ ওয়েবসাইট থেকে টাকা ইনকামের কয়েকটি উপায়

জ্যোতিষশাস্ত্র বলছে সঠিক নিয়মে গ্রহ-নক্ষত্র অনুযায়ী রত্ন ধারণ করলে ফিরতে পারে আপনার ভাগ্য, তাহলে আসুন জেনে নেই কোন আঙুলে কোন আংটি পরতে হয়ঃ

  • অনামিকায় রবির রত্ন এবং পোখরাজ ধারণ করতে হয়।
  • তর্জনীতে মঙ্গলের রত্ন এবং চুনী ধারণ করতে হয়।
  • কনিষ্ঠা বা মধ্যমাতে বুধ গ্রহের রত্ন ধারণ করতে হয়।
  • নীলা মধ্যমাতে রত্ন ধারণ করতে হয়।
  • বৃহস্পতির রত্ন এবং প্রবাল সব সময় তর্জনী বা অনামিকাতে ধারণ করতে হয়।
  • কনিষ্ঠা বা অনামিকায় সব সময় হীরা এবং পান্না ধারণ করতে হয়।
  • কনিষ্ঠ বা শুক্র গ্রহের রত্ন ধারণ করতে হয়।
  • মুনস্টোন কেবলমাত্র অনামিকায় ধারণ করতে হয়।

মুক্তা কোথায় পাওয়া যায়?

ভুমধ্যসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, ফ্রান্স আলজেরিয়া, মরক্কো, বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন প্রভৃতি দেশের দ্বীপে ও সমুদ্র প্রবাল পাওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, ভারত, চীন, জাপান, আমেরিকা, সিংহলদ্বীপ, পারস্য উপসাগর, বার্মা প্রভৃতি স্থানে মুক্তা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের গবেষকরা বলছেন অনুকূল আবহাওয়া, দেশজুড়ে অসংখ্য পুকুর জলাশয় থাকায়, উৎপাদন খরচ খুব কম হওয়ায় মুক্তা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের মধ্যে।

তবে এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশে মুক্তার বাজার যথেষ্ট বড় না হওয়ায়। তারপরও চাষীরা বলছেন তারা ভারতীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছেন, যা তাদের আগ্রহী করে তুলেছে। বাংলাদেশে পুকুর জলাশয়ে এমনিতে মাছের সাথে ঝিনুক পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ঢাকায় লালবাগে সচরাচর মুক্ত পাওয়া যায়।

ঝিনুকের মুক্তার দাম?

৪০ থেকে ৫০ টাকা খরচে,প্রতিপিস ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ঝিনুক বিক্রি হয়। বাজার বেশ ভালোই মুক্তা একটি দামি রত্ন ও আভিজাত্যের প্রতীক। প্রধানত মুক্তা অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

আসল মুক্তার মালার দাম কত?

রকমারি পোশাকের পাশাপাশি গহনার প্রতি আকর্ষণ মেয়েদের আদিকাল থেকেই। তবে ইদানিং ভারী সোনার গহনা পরার চাহিদা নারীদের খুব একটা নেই বললে চলে। সেক্ষেত্রে মুক্তার গয়না তার পছন্দের জায়গা ধরে রেখেছে আগের মতোই। বলতে গেলে মুক্তার গয়না এখন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।  সাদা মুক্তার চাহিদা বেশি হলেও রঙিন মুক্তার আকর্ষণও অনেক।

রঙিন মুক্তার চাষও কৃত্রিম ভাবে হচ্ছে। ইদানীং ভারত ও বাংলাদেশে মুক্তার চাষ শুরু হয়েছে। বড় লহরের মালা ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। ভারী সেট ১২ থেকে ৩০ হাজার টাকা, আংটি ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এদেশে মুক্তা আসে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে। বর্তমানে কৃত্রিম মুক্তার ভিড়ে খাঁটি মুক্তা প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে।

আরও পড়ুনঃ পল্লী বিদ্যুৎ খুঁটির জন্য আবেদন

আসল মুক্তা চেনার উপায়?

  • ব্ল্যাক মুক্তা কখনোই আসল হয় না।
  • আসল মুক্তায় থাকে ঝিনুকের মতো ঝলমলে আভা।
  • খাঁটি মুক্তা আগুনে পোড়ে না।
  • নকল মুক্তায় আপনি যদি দাঁত দিয়ে চাপ দেন, তাহলে দাগ বসে যায়।
  • মুক্তা যত বড় হবে তত ভালো।
  • মুক্তার গহনা সহজে নষ্ট হয় না।

শেষে কথা

আশাকরি পোস্টটি পড়ে আপনারা মুক্তা কোথায় পাওয়া যায় ও মুক্তার দাম, ঝিনুকের মুক্তার দাম, মুক্তার আংটির দাম, আংটি কোন আঙ্গুলে পড়তে হয়, বাংলাদেশে মুক্তার দাম কত?

আসল মুক্তার মালার দাম, আসল মুক্তা চেনার উপায় এসব সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পেরেছেন।এই বিষয় সম্পর্কে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে পারেন।

Leave a Comment